ইলিশ মাছের আদলে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটের কাছে তৈরী রেস্তোর প্রজেক্ট হিলসার খাবরের দাম নিয়ে এবার ফেসবুকে বইছে সমালোচনার ঝড়। উদ্বোধনের ১০ দিন না পেরুতেই মানুষের আগ্রহের স্থানটির প্রতি বিষোদগার করতে শুরু করেছে মানুষ।
ব্যতিক্রমী স্থাপনার কারণে অল্পদিনেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাড়া ফেলে শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে নবনির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় রেস্তোরাঁ ‘প্রজেক্ট হিলসা’। ফেসবুকে ছবি-ভিডিও দেখে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই রেস্তোরায় । তবে সেখানে খাবার দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ।
খাবার বিলের সঙ্গে সরকারি করের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত করছে সার্ভিস চার্জ বাবদ আরও ১০ শতাংশ টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা।
এসব অভিযোগ ছাড়াও অর্ডারের পর খাবার পরিবেশনে বিলম্ব এবং মূল আকর্ষণ ইলিশ মাছের মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে রেস্তোরাঁর পরিবেশ আর মানের তুলনায় দাম তেমন নয় বলছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৪০ হাজার বর্গফুট আয়তনের রেস্তোরাঁটিতে ইলিশ মাছের ২৪ ধরনের রেসিপিসহ মোট ৩০০ ধরনের খাবার পাওয়া যায়। তবে প্রতিটি খাবারের দামই আশপাশের অন্যান্য রেস্তোরাঁ থেকে দ্বিগুণ বা এর থেকেও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভোক্তারা।
ক্রেতারা বলছেন, খাবারে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ছাড়াও যুক্ত করা হয়েছে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। সবমিলিয়ে ২৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ চার হাজার টাকার খাবার খেলে মোট বিল গুনতে হবে পাঁচ হাজার আর ১০ হাজার টাকায় বিল হবে ১২ হাজার টাকা।
রেস্তোরাঁটিতে আগত একজন অতিথির বিল কপি থেকে দেখা যায়, প্রতি পিস বেগুনভাজার দাম রাখা হয়েছে ৫০ টাকা। যেখানে একই মানের বেগুনভাজা শিমুলিয়া ঘাটের অন্যান্য রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় ১৫-২০ টাকায়। প্রতি বাটি ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০০ টাকা। অন্য রেস্তোরাঁয় ডাল পাওয়া যায় ৫০-৭০ টাকা বাটি। আর প্রতি পিস ইলিশ মাছের দাম নেয়া হয়েছে ১৮০০ টাকা। যেখানে অন্য রেস্তোরাঁয় এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের প্রতি পিস ইলিশের দাম নেয়া হয় ১২০০-১৪০০ টাকা।
ওই ভোক্তার বিলের কপিতে দেখা যায়, তিনি বেগুনভাজির অর্ডার দিয়েছেন ৪১টি, ইলিশ ১৩টি, ডাল ২০ বাটি এবং ভাত ৪১ প্লেট। সব মিলিয়ে তার খাবার বিল হয়েছে ৩২ হাজার ৬২৫ টাকা। এরসঙ্গে সার্ভিস চার্জ গুনতে হয় তিন হাজার ২৬২ টাকা। আর ভ্যাট পাঁচ হাজার ২২২ টাকা মিলিয়ে বিল দাঁড়ায় ৪১ হাজার ১০৯ টাকা।
‘ফুডব্যাংক মুন্সিগঞ্জ’ নামের একটি খাবার বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপে রেস্তোরাঁটি নিয়ে একজনের করা পোস্টে আদনান আকিব নামের এক গ্রাহক মন্তব্য করেছেন, ‘প্রজেক্ট হিলসায় ২০০ টাকার সালাদ খেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ঘুম আসেনি আমার।’
অপর একজন মন্তব্য করেছেন, প্রজেক্ট হিলশায় যাওয়ার আগে পকেটের দিকে খেয়াল রাখুন...
আজ পরিচিত একজন স্বস্ত্রীক গিয়েছিল প্রজেক্ট হিলশায়। তিক্ত অভিজ্ঞতা জানাল। পদ্মাপাড়ের এই রেস্টুরেন্টে ঢাকার সবচেয়ে নামিদামি হোটেল-রেস্টুরেন্টের চেয়ে বেশি দাম রাখা হচ্ছে।
ভাতের প্লেট ১০০ টাকা! একটি বেগুণ ৫ পিচ করা প্রতি পিচের দাম ৫০ টাকা। অর্থাৎ একটি বেগুনের দাম ২৫০ টাকা!! পদ্মার ইলিশ যেটা বাইরে ৬০০-৭০০ সেটা ওখানে ১৫০০-২০০০ টাকা। তিনজনের পরিমাণ এক বাটি ডাল ২৫০ টাকা। মোট বিলের সঙ্গে ১৫% ভ্যাট দেওয়ার পরে আরো ১০% সার্ভিস চার্জ। তাহলে কী দাঁড়াইল?
প্রতিষ্ঠানটি নতুন। তারা ভালো করুক আমরা চাই। তাই বলে এভাবে গলাকাটা! ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর বিষয়টি গুরুত্ব দেবে আশা করি।
ফয়সাল আহমেদ নামের একজন বলেন, ‘গত শুক্রবার গিয়েছিলাম। খাবার অর্ডারের পর কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। উন্নত রেস্তোরাঁর এ কেমন অবস্থা?’
ইমাম সরকার হৃদয় নামে একজন জানান, অন্যান্য জায়গায় যে খাবার ৪০০ টাকা, একই খাবার এখানে ৮০০ টাকা লাগে।
আরেক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন, ‘আমরা শিমুলিয়া ঘাটে পদ্মার পাড়ে খোলা হাওয়ায় যাব আর ইলিশ খাব। অন্যান্য রেস্টুরেন্টে খাব, তারপরও হিলসায় নয়।’
খাবারের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অতিথিরা অভিযোগ করে বলেন, বেগুনভাজি পিস ৪০-৫০ টাকা, ডাল মানভেদে প্রতি বাটি ১০০-২০০ টাকা, আস্ত ইলিশ ১৫০০-২০০০ টাকা, সাদা ভাত ১০০ ও খিচুড়ি ২০০ টাকা (প্রতি প্লেট) করে নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘তাদের খাবারের যে দাম সেটা অবশ্যই মেন্যুকার্ডে উল্লেখ করে রাখতে হবে। ভোক্তারা এটি দেখেই খাবেন। ভোক্তারা যদি মনে করেন, এখানে দাম বেশি তাহলে তিনি ওখানে না-ও খেতে পারেন। খাবার দাম মেন্যুকার্ডে যা লিখে রাখা হবে তার থেকে বেশি নেয়া হলে সেটি অপরাধ হবে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
সার্ভিস চার্জের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ সার্ভিস চার্জ রাখা যাবে কি যাবে না, সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। তবে সার্ভিস চার্জের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে ঘোষণা দিতে হবে। মেন্যুকার্ডে লিখে রাখতে হবে। কাস্টমারকে জানিয়ে রাখতে হবে যে ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ রাখা হবে। এটি না করে থাকলে সেটি অপরাধ হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘প্রজেক্ট হিলসা’র ম্যানেজার নিশাত আহমেদ বলেন, ‘দাম বেশি কি-না আমি বলব না, তবে এই রকম একটি পরিবেশে যে ইনভেস্টমেন্ট...প্লাস ওভারঅল যা কিছু আছে, সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন থাকবে আসলেই বেশি রাখা হয়েছে কি-না? আমাদের কাছে দাম অত বেশি মনে হচ্ছে না। তারপরও সামনে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, কিছুর দাম কমতে পারে। এটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’
১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পার্কিং চার্জ, ইলেক্ট্রিসিটি, এসি সবকিছুর ওপর একটি চার্জ হয়। এটি বড় বড় রেস্তোরাঁতেও ধার্য করা হয়। এটি মেন্যুকার্ডে উল্লেখ করা আছে। আবার আমরা অনেক অতিথির কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নেইনি; এ কথা কেউ বলে না।’
0 Comments