সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বেগম খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। ইনজেকশন দিয়ে রক্তক্ষরণ ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও খুব বেশি ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। অব্যাহত রক্তক্ষরণের ফলে তার হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখার জন্য দিতে হচ্ছে নিয়মিত রক্ত। ওঠা-নামা করছে শরীরের খনিজ ক্ষমতা। কমে গেছে খাবারের রুচি। যার ফলে শরীর ভয়ানকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত দু’দিন ধরে তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় বিপদ হতে পারে। তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন।
মেডিকেল সূত্র থেকে জানা গেছে, রবিবার বেগম খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়েছিলো গোসল করানোর জন্য। খেতে দেয়া হচ্ছে স্যুপ ও তরল খাবার। ডায়াবেটিস থাকছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ওষুধ ও ইনসুলিন দিয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের চারতলায় সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন বেগম জিয়া। সাততলায় দুটি কেবিন নেয়া হয়েছে। সেখানে খালেদাকে দেখতে আসা পরিবারের সদস্য এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেহরক্ষীরা (সিএসএফ) অবস্থান করেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত আটজন ডাক্তার সার্বক্ষণিক তার শারীরিক অবস্থার পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা হলেন ডা. শাহাবুদ্দনি তালুকদার, ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন, ডা. আরেফিন আহমেদ, ডা. ফাহমিদা বেগম, ডা. নিশাত এবং ডা. এনসিং।
প্রয়াত পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি নিয়মিত হাসপাতালে আসা-যাওয়া করেন। খালেদা জিয়ার ছোট ভাইয়ের বউ নাসরিন সাঈদ শনিবার বিকেলে এভার কেয়ার হাসপাতালে আসেন। সেদিন রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। সেখানে তিনি দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করেন। মূলত, হাসপাতালের সিসিইউতে মির্জা ফখরুল, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং সিথি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না বলে হাসপাতাল সূত্রে থেকে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের কাছে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বেগম জিয়ার চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিবার্তাকে বলেন, কিছুক্ষণ আগে তার সাথে আমার কথা হয়েছে। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। গোটা দল এবং জাতি উৎকন্ঠার মাঝে রয়েছে। তিনি বলেন, এই নির্দয় সরকার আমাদের নেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে দিলো না। এটা শুধু অন্যায়ই নয়, অবিচার।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিবার্তাকে বলেন, বেগম জিয়া আগের মতই আছেন। কোন উন্নতি নেই। বরং দিনকে দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন আহমেদ তালুদকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন।
0 Comments