জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ১৯৭৫-এর পর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য (এমপি) পায় আওয়ামী লীগ। এর আগে আসনটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পাঁচবার ও জাতীয় পার্টি দুবার নির্বাচিত হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে তৎপর আওয়ামী লীগ। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। সভা-সমাবেশে একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তব্যও দিচ্ছেন। দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এমন দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের পর ২০০৬ সালে মুন্সিগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসন থেকে কমে তিনটি আসন করা হয়। বর্তমানে সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-৩ আসন।
আগামী নির্বাচনে এই আসনে সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের বড় ছেলে ও মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব, সাবেক এমপি ও যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক আবদুর রহমান জীবনসহ আরও হাফ ডজন নেতা
বিএনপি থেকে আলোচনায় আছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাই। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর বিকল্প হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুজ্জামান রতন। মনোনয়ন চাইবেন মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ইরাদত মানু।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন অভিনেতা রফিকউল্লাহ সেলিম ও জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ এফ এম আরিফুজ্জামান দিদার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ।
আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ার পেছনে স্থানীয় রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আনছেন দলীয় সচেতন নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুটি ভাগে নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও এমপি মৃণাল কান্তি দাস।
মৃণালপন্থীদের অভিযোগ, একক ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় মৃণালকে মানতে পারছে না মহিউদ্দিনের পরিবার। অন্যদিকে মহিউদ্দিনপন্থীদের অভিযোগ, বর্তমান এমপি নিজের স্বার্থে নৌকার বিরোধিতা করেন। সবশেষ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি নৌকার বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে গজারিয়া উপজেলা শাখার সম্মেলনেও বিষয়টি সামনে আনেন জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনিস-উজ্জামান।
নির্বাচনী ভাবনা ও দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে গত বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে এমপি মৃণাল কান্তি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
মহিউদ্দিনপন্থী পক্ষের হয়ে প্রার্থী হতে আগ্রহী ফয়সাল বিপ্লব ইতিমধ্যে তাঁর অবস্থান জানান দিয়ে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় দলীয় পদধারী নেতা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সমর্থন পেতে পারেন। ফয়সাল বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এই আসন থেকে নির্বাচন করব।’
নির্বাচনী প্রস্তুতির আগে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে দুটি পক্ষ আছে। তাঁরা হলেন জেলার আহ্বায়ক আব্দুল হাই ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন। দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন কামরুজ্জামান রতন। এরপর দলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হাইয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে শহরের মুক্তারপুরে দলীয় এক কর্মসূচিতে দুজনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি নিয়ে পরে দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন রতন।
এ বিষয়ে জানতে গত শুক্র ও শনিবার একাধিকবার কামরুজ্জামান রতনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও শহর বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ইরাদত মানু বলেন, এখন তাঁরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আপাতত নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।
0 Comments